প্রধানমন্ত্রীর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টর্নেডো দুর্গত এলাকা সফর
রাজীব নূর, সুমন মোল্লা, শাহাদৎ হোসেন ও দুলাল ঘোষ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে | তারিখ: ২৬-০৩-২০১৩
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টর্নেডো-দুর্গত এলাকা সফর করেছেন। গত কয়েক দিন স্থানীয় প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা না গেলেও তাঁর সফরকে কেন্দ্র করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ত্রাণ, উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম গতি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকেলে হেলিকপ্টারযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ মুহাম্মদ স্টেডিয়ামে নামেন। সেখান থেকে সড়কপথে প্রথমে টর্নেডো ক্ষতিগ্রস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার উড়শিউরা গ্রামে যান। পরে একই উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত জারুলতলা গ্রামে যান। বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি চিনাইর গ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলেজ মাঠের সমাবেশস্থলে ত্রাণ বিতরণ করেন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক নূর মোহাম্মদ মজুমদারের সভাপতিত্বে সেখানে এক সমাবেশে তিনি বক্তৃতা করেন।
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা মনোবল হারাবেন না। আমরা আপনাদের পাশে আছি; পাশে থাকব।’ তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঘর নির্মাণের জন্য ঢেউটিন ও নগদ টাকা বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রায় সাড়ে ছয় শ তাঁবু পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মেরামত করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের বিনা পয়সায় বই-খাতা দেওয়া হবে।
সমাবেশে স্থানীয় সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী টর্নেডোয় ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি জানান, এলাকার দেড় হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শতাধিক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর কোনো শিক্ষা উপকরণ নেই। সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন ত্রাণমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
ত্রাণ, উদ্ধার ও পুনর্বাসনে হঠাৎ গতি: উপড়ে পড়া গাছ সরাতে গতকাল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ব্যস্ততা দেখা যায়। সড়কের পাশে গবাদিপশুর পরিচর্যায় ব্যানার সাঁটিয়ে ‘প্রাণিসম্পদ ক্যাম্প’ করা হয়। এখানে-ওখানে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। বৈদ্যুতিক লাইন সচল করতে কর্মীদের তৎপরতা লক্ষ করা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন ঠিক করতে ঘটনাস্থলে রেলওয়ের কর্মকর্তারা যান। টর্নেডো-দুর্গত এলাকায় গতকাল এমনই চিত্র দেখা যায়। অথচ এক দিন আগেও এসবের কিছুই দৃষ্টিগ্রাহ্য ছিল না।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্গত এলাকায় প্রধানমন্ত্রী আসার কথা শুনে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। অবশ্য এই তৎপরতা সীমাবদ্ধ ছিল কেবল সদর উপজেলার চিনাইর, পার্শ্ববর্তী জারুলতলা ও ভাতশালা গ্রামে। দুর্গত অন্য এলাকায় সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়নি। উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর গ্রাম চিনাইর। এ গ্রামই ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থল।
গতকাল কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, টর্নেডো-দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সমস্যায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দুর্গত এলাকার বাতাস এখনো দুর্গন্ধমুক্ত হয়নি। এখনো অপসারণ করা যায়নি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মৃত গবাদিপশু। লোকজন এখনো আছে খোলা আকাশের নিচে। আগের মতোই শূন্য ভিটায় পলিথিন ও চাদর টানিয়ে তপ্ত রোদ মোকাবিলা করছেন। সামাজিক উদ্যোগে আসা শুকনো খাবারে ক্ষুধা নিবারণ করতে হয়েছে তাদের। অবশ্য গতকাল অনেকেই সরকারি ত্রাণকেন্দ্র থেকে ৩০ কেজি করে চাল পেয়েছে।
তবে জারুলতলা গ্রামের বিভিন্ন স্থানে গতকাল উদ্ধারকর্মীদের জোরেশোরে কার্যক্রম চালাতে দেখা গেছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ঘটনার দিন থেকে আমরা মাঠে আছি। এ পর্যন্ত ১৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছি। আহত ৭৫ জনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’
জারুলতলা গ্রামের ফিরোজ মিয়ার স্ত্রী শেফালী বেগম বলেন, ‘এই প্রথম সরকারি লোক দেখলাম (উদ্ধারকর্মী)। মরা গরু নিজে সরাইছি। ভিটামাটি নিজেরাই পরিষ্কার করছি।’প্রধানমন্ত্রীর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টর্নেডো দুর্গত এলাকা সফর
রাজীব নূর, সুমন মোল্লা, শাহাদৎ হোসেন ও দুলাল ঘোষ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে | তারিখ: ২৬-০৩-২০১৩
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টর্নেডো-দুর্গত এলাকা সফর করেছেন। গত কয়েক দিন স্থানীয় প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা না গেলেও তাঁর সফরকে কেন্দ্র করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ত্রাণ, উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম গতি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকেলে হেলিকপ্টারযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ মুহাম্মদ স্টেডিয়ামে নামেন। সেখান থেকে সড়কপথে প্রথমে টর্নেডো ক্ষতিগ্রস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার উড়শিউরা গ্রামে যান। পরে একই উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত জারুলতলা গ্রামে যান। বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি চিনাইর গ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলেজ মাঠের সমাবেশস্থলে ত্রাণ বিতরণ করেন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক নূর মোহাম্মদ মজুমদারের সভাপতিত্বে সেখানে এক সমাবেশে তিনি বক্তৃতা করেন।
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা মনোবল হারাবেন না। আমরা আপনাদের পাশে আছি; পাশে থাকব।’ তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঘর নির্মাণের জন্য ঢেউটিন ও নগদ টাকা বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রায় সাড়ে ছয় শ তাঁবু পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মেরামত করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের বিনা পয়সায় বই-খাতা দেওয়া হবে।
সমাবেশে স্থানীয় সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী টর্নেডোয় ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি জানান, এলাকার দেড় হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শতাধিক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর কোনো শিক্ষা উপকরণ নেই। সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন ত্রাণমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
ত্রাণ, উদ্ধার ও পুনর্বাসনে হঠাৎ গতি: উপড়ে পড়া গাছ সরাতে গতকাল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ব্যস্ততা দেখা যায়। সড়কের পাশে গবাদিপশুর পরিচর্যায় ব্যানার সাঁটিয়ে ‘প্রাণিসম্পদ ক্যাম্প’ করা হয়। এখানে-ওখানে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। বৈদ্যুতিক লাইন সচল করতে কর্মীদের তৎপরতা লক্ষ করা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন ঠিক করতে ঘটনাস্থলে রেলওয়ের কর্মকর্তারা যান। টর্নেডো-দুর্গত এলাকায় গতকাল এমনই চিত্র দেখা যায়। অথচ এক দিন আগেও এসবের কিছুই দৃষ্টিগ্রাহ্য ছিল না।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্গত এলাকায় প্রধানমন্ত্রী আসার কথা শুনে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। অবশ্য এই তৎপরতা সীমাবদ্ধ ছিল কেবল সদর উপজেলার চিনাইর, পার্শ্ববর্তী জারুলতলা ও ভাতশালা গ্রামে। দুর্গত অন্য এলাকায় সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়নি। উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর গ্রাম চিনাইর। এ গ্রামই ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থল।
গতকাল কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, টর্নেডো-দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সমস্যায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দুর্গত এলাকার বাতাস এখনো দুর্গন্ধমুক্ত হয়নি। এখনো অপসারণ করা যায়নি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মৃত গবাদিপশু। লোকজন এখনো আছে খোলা আকাশের নিচে। আগের মতোই শূন্য ভিটায় পলিথিন ও চাদর টানিয়ে তপ্ত রোদ মোকাবিলা করছেন। সামাজিক উদ্যোগে আসা শুকনো খাবারে ক্ষুধা নিবারণ করতে হয়েছে তাদের। অবশ্য গতকাল অনেকেই সরকারি ত্রাণকেন্দ্র থেকে ৩০ কেজি করে চাল পেয়েছে।
তবে জারুলতলা গ্রামের বিভিন্ন স্থানে গতকাল উদ্ধারকর্মীদের জোরেশোরে কার্যক্রম চালাতে দেখা গেছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ঘটনার দিন থেকে আমরা মাঠে আছি। এ পর্যন্ত ১৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছি। আহত ৭৫ জনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’
জারুলতলা গ্রামের ফিরোজ মিয়ার স্ত্রী শেফালী বেগম বলেন, ‘এই প্রথম সরকারি লোক দেখলাম (উদ্ধারকর্মী)। মরা গরু নিজে সরাইছি। ভিটামাটি নিজেরাই পরিষ্কার করছি।’