ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দারিয়াপুর এলাকায় অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বেঁকে যাওয়া প্রতিরোধে ৮টি অংশে ১২৬ ফুট পরপর রেললাইন কাটার কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত তিনটি অংশে রেললাইন কাটা হয়। এ কাজ চলায় ঢাকা অভিমুখী রেলপথ (আপলাইন) দিয়ে ধীরগতিতে ট্রেন চলছে।
ওই আট অংশে রেললাইন কাটা শেষে কাঠের স্লিপার পরিবর্তন করে পিসি স্লিপার (সিমেন্টের) লাগানো হবে। আখাউড়া রেলওয়ে জংশনের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন, দারিয়াপুর এলাকায় গত বৃহস্পতিবার কনটেইনার বহনকারী মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় ৬২৫টি স্লিপার ভেঙে গেছে। আরও ১৫-২০ দিন সময় লাগবে ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন মেরামত করতে ।
তিনি আরো বলেন, আপলাইনে ২ কিলোমিটার ২০০ মিটার পরপর রেললাইনে জয়েন্ট রয়েছে। এটিকে বাফার বলে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে রেললাইন লম্বা হয়ে যায়। তাই দারিয়াপুর এলাকায় ১২৬ ফুট পরপর আটটি পয়েন্টে রেললাইন কাটা হবে।
গত বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে একটার দিকে দারিয়াপুর এলাকায় রেললাইন বেঁকে কনটেইনার বহনকারী ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর ২৮ ঘণ্টা পর গত শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে লাইনচ্যুত হওয়া ট্রেনের সাতটি বগি উদ্ধার করা হয়। এরপর ওই এলাকায় গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রেললাইন আবার বেঁকে যায়। চট্টগ্রাম ও সিলেট অভিমুখী রেলপথেরও (ডাউনলাইন) কয়েকটি জায়গায় বেঁকে যায়। পানি ও কচুরিপানা দিয়ে রেললাইন শীতল করা হয়। এতে গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামের সব ট্রেন ডাউনলাইন দিয়ে গতি কমিয়ে চলাচল করেছে।
রোববার সন্ধ্যায় আখাউড়া রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান আহমেদ বলেন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। আপলাইন দিয়ে ট্রেন এলে লাল নিশানা উড়িয়ে কাজ বন্ধ রেখে ট্রেন যাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ট্রেন চলে গেলে আবার কাজ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার থেকে দিনরাত টানা কাজ করছে। কেউ বিশ্রামই নিতে পারছেন না।
রোববার দুপুরে সদর উপজেলার দারিয়াপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে কর্মীরা আপলাইন মেরামতের কাজ করছেন। ঠান্ডা রাখতে আবারও রেললাইনে কচুরিপানা দেওয়া হয়েছে। কাজ চলার সময় বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে আপলাইন দিয়ে ঢাকামুখী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেন আসে। ওই সময় লাল নিশানা উড়িয়ে ট্রেন থামাতে লোকোমাস্টারকে সংকেত দেন রেলওয়ের কর্মীরা। রেললাইনের ওপর থেকে সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়ার পর লোকোমাস্টার খুব ধীরগতিতে ট্রেন চালিয়ে এলাকাটি অতিক্রম করেন। কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেন যাওয়ার পর রেলওয়ের কর্মীরা আবার রেললাইন কাটার কাজ শুরু করেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত তিনটি অংশে রেললাইন কাটা হয়।
এ সময় রেলের ঢাকা অঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ সিরাজ জিন্নাত, আখাউড়া রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান আহমেদ ও আখাউড়া রেলওয়ে জংশনের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) মনিরুল ইসলামকে মেরামতকাজের তদারকি করতে দেখা যায়।
রোববারও দারিয়াপুর এলাকায় রেললাইনের তাপমাত্রা ৫০-৫৫ ডিগ্রি পাওয়া গেছে জানিয়ে বিকেলে রেলওয়ের কর্মী স্বপন মিয়া, ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, সুলায়মান গনি ও ওসমান গনি বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে আমরা দিনরাত টানা কাজ করছি। কেউ বিশ্রাম নেওয়ার সময় পাচ্ছি না।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার জসিম উদ্দিন বলেন, আপলাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। শুধু গোকর্ণ লেভেলক্রসিং এলাকা থেকে দুর্ঘটনাকবলিত দারিয়াপুর পর্যন্ত আপলাইনের সব ট্রেন ১০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করছে।