ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় নির্মাণাধীন সেতুর পাশের বিকল্প সড়কটি ভেঙে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে আখাউড়া স্থলবন্দর ও পৌর এলাকার সঙ্গে উপজেলার তিন ইউনিয়নের যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ আছে। নির্মাণাধীন সেতুর রডের ওপর দিয়ে হেঁটে মানুষ পার হলেও যান চলাচলের কোনো সুযোগ নেই।
গত সোমবার রাতে আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রামের ওই সড়ক ভেঙে যায়। আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত সড়কটিতে যান চলাচলের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে আখাউড়ার তিন ইউনিয়নের ৮০ হাজার বাসিন্দা দুর্ভোগে পড়েছেন। এই সড়ক দিয়েই পাশের কসবা উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়।
সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় সিটিজেন ব্যাংকের কসবা শাখার কর্মকর্তা ও আখাউড়া উপজেলা রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা সমীর চক্রবর্তী আজ সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে সাত কিলোমিটার পথ বেশি পাড়ি দিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গতকাল বিকেলে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার সময় অনেক কষ্ট করে সেতুর ওপর উঠি। রডের ওপর রাখা বাঁশের ওপর দিয়ে হেঁটে পার হয়েছি। আর আজ সকালে আখাউড়ার তিরাগনের ভেতর দিয়ে প্রায় ৬-৭ কিলোমিটার বেশি পথ পাড়ি দিয়ে কর্মস্থল কসবায় পৌঁছেছি। বিকল্প সড়ক না থাকায় আমাদের চলাচলে অনেক কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রামে বেইলি সেতুর বদলে রড-সিমেন্টের সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুটি নির্মাণের জন্য পাশে মাটির একটি বিকল্প সড়ক করা হয়েছে। সড়কটি দিয়েই মানুষ ও যান চলাচল করে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সোমবার দিনভর বৃষ্টি হয়। এর বাইরে ভারতের ত্রিপুরা থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে রাত তিনটার দিকে সড়কটি ভেঙে যায়। এতে উপজেলা সদর, স্থলবন্দর ও পৌর এলাকার সঙ্গে মোগড়া, মনিয়ন্দ ও ধরখার ইউনিয়নের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
নির্মাণাধীন সেতুর পাশের বিকল্প সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আজ বুধবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রামেছবি: প্রথম আলো
দেবগ্রামের বাসিন্দা আশকর আলী, ইমাম হোসেন ও মিজানুর রহমান বলেন, আখাউড়া স্থলবন্দর, বাজার, রেলওয়ে জংশন স্টেশন, আখাউড়া থানা, উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হলে এই সড়ক দিয়েই যেতে হয়। সেতুর পাশের বিকল্প সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয় লোকজনকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, আগরতলা থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি মূলত দেবগ্রামের সেতুর নিচে খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু সেতু নির্মাণের জন্য পাশে তৈরি করা বিকল্প সড়কের নিচ দিয়ে পানি সরার দুটি পাইপ বসানো হয়েছে। ঠিকাদারকে এলাকাবাসী চারটি পাইপ দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তাঁরা না শোনায় পানির চাপে সড়কটি ভেঙে গেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মো. ওমর ফারুক বলেন, তাঁরা প্রয়োজনমতো পাইপ দিয়েছিলেন। কিন্তু পানির প্রবাহ বাড়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়। দু-এক দিনের মধ্যে ঢালাইয়ের কাজ শেষ হলে হালকা যানের জন্য নতুন সেতু খুলে দেওয়া হবে। সেতুর ওপর ঢালাইয়ের কাজ চলছে। এর মধ্য দিয়েই মানুষ চলাচল করছেন।
পানির স্রোত বেশি থাকায় ওই স্থানে বিকল্প সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নেই জানিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে সেতুর ঢালাইয়ের কাজ শেষ হলে আগামী সাত দিনের মধ্যে হালকা যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হবে। আপাতত ঢালাইয়ের কাজ চলার পাশাপাশি সেতুর ওপর দিয়েই মানুষ হেঁটে পার হচ্ছেন। বিকল্প সড়ক না থাকায় এটুকু সহ্য করতেই হবে। এতে হয়তো ঢালাইয়ের কাজ প্রলম্বিত হবে, তবে কাজের গুণগত মানে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে তিনি জানান।