ভারতের ত্রিপুরা থেকে আসছে বিষাক্ত পানি। এই বিষাক্ত পানি সিঅ্যান্ডবি খাল আর জাজি নদী দিয়ে আখাউড়ার সদর দক্ষিণ ইউনিয়নের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।উপজেলার সীমান্তবর্তী প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কায় পড়েছে কুচকুচে কালো আর উৎকট গন্ধের এই পানির কারণে। আখাউড়ার প্রায় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ধান ওই পানিতে চাষ হচ্ছে।
আখাউড়ার উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ওই খাল ও নদী দিয়ে ভারত থেকে পানি নেমে আসছে আখাউড়ায়। তবে কয়েক বছর ধরে এই পানির রং আগের তুলনায় কুচকুচে কালো, গন্ধ তীব্র আর উৎকট। এই পানিতে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। আখাউড়ার সীমান্তবর্তী প্রায় ১৫টি গ্রামের চাষিরা শ্বাসকষ্ট আর চুলকানিতে ভুগছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আখাউড়া স্থলবন্দর সীমান্তের শূন্য রেখা থেকে সিঅ্যান্ডবি খাল দিয়ে নামছে ওই পানি। আবার, সীমান্তের কালিকাপুর গ্রামের জাজি নদী দিয়েও আসছে কালো পানি। এই নদীর পানি মোগড়া ইউনিয়নের ধাতুর পহেলা আর নয়াদিল দিয়ে এবং খালের পানি পৌর শহরের তারাগন হয়ে দেবগ্রাম দিয়ে এবং শহরের প্রধান সড়কের পাশ ধরে নেমে এসে মিশে যাচ্ছে তিতাস নদে।
আখাউড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান হাবীব বলেন, কৃষি, বন ও পরিবেশ এবং মৎস্য বিভাগ গত নভেম্বরে প্রাথমিক কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছে। তাতে ওই পানিতে আখাউড়ার সীমান্তবর্তী সদর দক্ষিণ ইউনিয়ন ও মোগড়া ইউনিয়ন এবং পৌরসভার একটি অংশে বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আখাউড়া কৃষি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, প্রায় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে এই কালো পানি দিয়ে ধানের চাষ হয়। উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নে ধানি জমি বেশি। মোগড়া ইউনিয়ন ও আখাউড়া পৌরসভারও কিছু জমি আছে। নদী ও খাল থেকে মেশিনে জমিতে পানি দেওয়ার সময় ওই পানি ধানগাছের পাতায় লাগলে গাছ লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। সেচের পানি যেখানে প্রথম পড়ছে, সেখানকার ধানগাছ পুড়ে যাচ্ছে।
ভারত থেকে আসা পানিতে ক্ষতিকর কোনো রাসায়নিক রয়েছে। এ কারণেই এমনটি হচ্ছে জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন বলেন, ঠিক কী কী ক্ষতির সম্ভাবনা আছে, তা নিশ্চিত হতে পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।
আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফালু মিয়ার বাড়ি সিঅ্যান্ডবি খালের পাশে। চার মাস ধরে তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। এ ছাড়া গত সপ্তাহ থেকে চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, ইদানীং উপজেলার সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্ট আর চুলকানির প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে দেখা দিয়েছে।
এসব বিষাক্ত পানির উৎকট গন্ধের কারণে আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী, শুল্ক ও বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা এবং বিজিবির সদস্যরাও নিজেদের কার্যালয়ে কাজ করতে পারছেন না।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর ১২ ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর তছলিম উদ্দিন জানান, স্থলবন্দর বিজিবি ক্যাম্পের জোয়ানদের সেখানে সাত দিনের বেশি রাখা যাচ্ছে না। তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন খালের পানির গন্ধে । এসব স্থানে তাই নিয়মিত নতুন জোয়ান পাঠাতে হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোশাররফ হোসেন বলেন, ৩ ফেব্রুয়ারি আগরতলায় জেলা প্রশাসকদের সীমান্ত সম্মেলনে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারেই দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ভারতের বিষাক্ত পানির কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আখাউরার সীমান্তবর্তী প্রায় ১৫টি গ্রাম
|
February 11, 2015 |