নিজস্ব প্রতিবেদক, মোঃ সাইফুল আলম – আখাউড়া ডট কম
সবুজ মাল্টার চাষে প্রতিযোগিতার রুপ পাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। আখাউড়া, বিজয় নগর, সদর উপজেলাসহ প্রায় সব স্থানেই চাষ হচ্ছে সবুজ মাল্টা। বিশেষ করে গত ৪ বছর ধরে স্বপ্নের মতো একটি ফলন পাচ্ছে এই এলাকার কৃষকরা। মাটি উর্বর ও সঠিক গাইড লাইন পাবার কারনে চলতি বছর সবুজ মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। আর এতেই চাষিদের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি।
সরোজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই অঞ্চলে মাল্টার আবাদ শুরু হয় ২০১৫ সাল থেকে। শুরু থেকেই বারি ১ মাল্টার চাষ করে সাফল্য পাচ্ছেন কৃষকরা। আর তাই এই সবুজ মাল্টা বারি ১ চাষ অব্যাহত রেখেছেন। আখাউড়ায় ছোট বড় মিলিয়ে মোট ৪৬৬টি মাল্টার বাগান রয়েছে। আর আখাউড়া উপজেলায় মোট চাষ যোগ্য মাল্টার জমির পরিমান ১৫ হেক্টর। এবার গত বছরের তুলনায় সাড়ে তিন হেক্টর বেশি জমিতে মাল্টার চাষ করা হয়েছে। বারি ১ সবুজ মাল্টার বাম্পার ফলনে চাষিদের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটেছে। মনে বুনছে নতুন স্বপ্ন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ১৩৫ হেক্টর জমিতে সবুজ মাল্টার চাষ করা হয়েছে। জাত বারি ১ মাল্টা। এসব বাগানে উৎপাদন হয় ২৭০০ মেট্টিক টন মাল্টা। এবং এই বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় ২৭ কোটি টাকার মাল্টা বিক্রি হয়।
বাণিজ্যিকভাবে মাল্টার চাষ সবচেয়ে বেশী হয় আখাউড়া, বিজয় নগর, চম্পকনগর, বিষ্ণুপুর ও সিঙ্গারবিল ইউনিয়নে। এই এলাকার চাষিদের মধ্যে সবার আগে সুনাম কুড়িয়েছেন ইসহাক মেম্বার। তিনি ৬২ শতাংশ জায়গায় নিয়ে মাল্টা চাষ প্রকল্প শুরু করেন। তার জমিতে ১০০টি মাল্টা গাছ এবং ৩০ টি কমলা গাছ। ইসহাক মেম্বারের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার কৃষি কর্মকর্তার সহায়তায় তিনি বাগান শুরু করেন। সরকারি ভাবে চারা সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, প্রথমে আমাকে যে চারা দিয়েছিল আমি ভেবেছিলাম তা টিকবে না। কিন্তু নিয়মিত পরিচর্যা ও পরামর্শের কারনে আলহামদুলিল্লাহ্ প্রথম বছরই আমি ৮০ কেজি মাল্টা পাই। নিজেরাই আত্মীয় স্বজন মিলে খাই। স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় লাগে আমার কাছে। ২য় বছর আরও বেশী ফলন পাই। অনেক ফুনাফা হয়। ৩য় বছর প্রায় দের লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করি। আর এই বছর প্রায় ৪ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করে লাভ হয়।
নিজের বাগান দেখতে কেমন লাগে প্রশ্নে ইসহাক মেম্বার বলেন, এটা সত্যি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। বেশিরভাগ মাল্টা আমার বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যায় মানুষ। দেখতে সুন্দর, সাইজে বড় ও স্বাদে মিষ্টি হবার কারনে চারদিকে আমার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এই বয়সে এমন একটি কাজে আমার অনেক গর্ব বোধ হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে এই বাগানে ছবি তুলছে ও আমার খোঁজ খবর নিচ্ছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয় নগর উপজেলার সিংগারবিল ইউনিয়নের নোয়াবাদি গ্রামটি এখন বহির্বিশ্বেও চিনেছে। এখন অনেকে বিদেশ থেকেও ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন ও সাধুবাদ জানাচ্ছেন।
উপজেলার চাষী সোহাগ ভূইয়া জানান, তিনি ৬০ শতাংশ জায়গায় মাল্টার বাগান করেছেন। ৫ বছর আগে ৬০টি মাল্টা চারা দিয়ে বাগান শুরু করেন বর্তমানে তার বাগানে রয়েছে ১৬০টি মাল্টা গাছ। তিনি বলেন, সব গুলো গাছে পরিপূর্ণভাবে ফলন ধরেছে।
চাষী হাফিজুর রহমান বলেন, তার বাগানে ১০০টি গাছ রয়েছে। এর মধ্যে বারি মাল্টা-১ জাত বেশি। তিনি বলেন, তার নতুন বাগান। অন্যান্য চাষীদের দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হয়ে বাগান করেছেন। স্থানীয় কৃষি অফিসের সহায়তা গাছগুলো রোপণ করেছেন। বাগানটি করতে তার দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৩৫ হেক্টর জমিতে সবুজ মাল্টার চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হেক্টর, সরাইল উপজেলায় ২ হেক্টর, কসবা উপজেলায় ৩৫ হেক্টর, নবীনগর উপজেলায় ১০ হেক্টর, বাঞ্চারামপুর উপজেলায় ৫ হেক্টর, নাসিরনগর উপজেলায় ১ হেক্টর, আখাউড়া উপজেলায় ১৫ হেক্টর, আশুগঞ্জ উপজেলায় ১ হেক্টর ও বিজয়নগর উপজেলায় ৬৫ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ করা হয়েছে। চলতি বছর গত বছরের তুলনায় সাড়ে তিন হেক্টর বেশি জমিতে মাল্টার চাষ করা হয়েছে।
এছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছোট বড় মিলিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রয়েছে ১ হাজার ৮৮০টি মাল্টার বাগান। এর মধ্যে আখাউড়ায় ৪৬৬টি, বিজয়নগরে ৭৫৪টি ও কসবায় ৬৬০টি মাল্টার বাগান রয়েছে। মাল্টা বাগান পরিদর্শনে আশা আলমগীর ভুঁইয়া বলেন, বাগান দেখতে অনেক ভালো লাগছে। আমি বাগান থেকে সতেজ ও সবুজ মাল্টা কিনেছি। বাগানেই একটু কেটে খেয়ে দেখেছি, স্বাদে অনেক চমৎকার। এখানকার যে মাল্টা তা এই এলাকার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য এলাকার চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে বলে আমি মনে করি। সত্যিই যে সমস্ত জমি এক সময় পতিত জমি হিসেবে ব্যাবহার হতো। বছরের পর বছর খিল পড়ে থাকতো সেসমস্ত জমিতে এখন ভালো ফলের ফলন হচ্ছে। বিশেষ করে আখাউড়া, বিজয়নগর ও কসবা উপজেলার অভূতপূর্ব সাফল্য নিয়ে এসেছে মাল্টার ফলনের মাধ্যমে। এই সাফল্য দেখে অনেকেই উদ্ভুদ্ধ হবেন আশা করছি। খুঁজে পাবেন স্বাবলম্বী হবার নতুন দিগন্ত।