নিজস্ব প্রতিবেদক, মোঃ সাইফুল আলম – আখাউড়া ডট কম
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বিভিন্ন স্থানে তরমুজে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন অনেকেই। শীতকালীন তরমুজ চাষে ভালো সফলতা আসে এমনটাই দেখা যায়। তাই জেলার অনেক শিক্ষার্থীসহ অনেক কৃষক শীতকালীন তরমুজ চাষ। এছাড়া এই এলাকায় আরও একটি বড় বিষয় হচ্ছে হলুদ তরমুজ চাষ। বর্তমানে অনেকেই কৃষিতে আধুনিকায়ন নিয়ে আসছেন এবং চাষে সফলও হচ্ছেন। দিন দিন হলুদ তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকেই।
আজকাল অনেকেই কৃষিতে আগ্রহী হচ্ছেন। অনেকের তরমুজ চাষে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। দিন দিন জনপ্রিয় তাই হয়ে উঠছে তরমুজ চাষ। বিশেষ করে পতিত জমিতে এবং মাচা পদ্ধতিতে হচ্ছে অনেক এলাকায় তরমুজ চাষ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সবুজ তরমুজ, হলুদ তরমুজ এবং বারোমাসি তরমুজ চাষ হচ্ছে। বেশীরভাগ কৃষকই লাভের মুখ দেখেছেন এবং তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।
কালো তরমুজ চাষ করে সফল হওয়ার পর অনেক কৃষক এবার চাষ করেছেন হলুদ তরমুজের। দেখলে চোখাজুড়িয়ে যায় আর খেতেও রসালো ও সুস্বাদু এই তরমুজ। বিক্রি করে লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা।
জানা যায়, কসবা উপজেলার কুটি ইউনিয়নের জাজিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা এবং কুমিল্লা কোটবাড়ী শহীদ স্মৃতি প্যারামেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ছামিউল্লাহ। অলস সময়ে মোবাইল ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে ইউটিউবে তিনি দেখেন কুমিল্লার এক তরমুজ চাষির গল্প। পরে ওই চাষির সাথে যোগাযোগ করে তরমুজ চাষের পরামর্শ নেন তিনি। পরামর্শ অনুযায়ী চার জাতের তরমুজের চারা রোপণ করেন। এর মধ্যে ব্ল্যাক বেবি, গোল্ডেন ক্রাউন এবং বাংলাদেশি জাত মধুমালা এবং সুপার কিং অন্যতম। ফলন ভালো হওয়ায় লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন এই শিক্ষার্থী।
মো. ছামিউল্লাহ বলেন, আমি প্রথমে ইউটিউবে কুমিল্লার এক তরমুজ চাষির গল্প দেখি। পরে ওনার সাথে যোগাযোগ করে কোথায় থেকে বীজ নিতে হবে সেটি জানলাম। পরে আমি ফোন করে বীজ এনেছি। আমি এখানে চার জাতের তরমুজ ব্ল্যাক বেবি, গোল্ডেন ক্রাউন এবং বাংলাদেশি জাত মধুমালা এবং সুপার কিং চাষ শুরু করি। আমার এই গাছগুলো সম্পূর্ণভাবে ফলন দিয়েছে। এখনও আমি বিক্রি শুরু করেনি। আশা করছি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিক্রি শুরু করতে পারব।
আরও পড়ুনঃ আখাউড়ায় মাল্টার বাম্পার ফলন, পুরো জেলায় রয়েছে ১৮৮০টি মাল্টার বাগান
প্রথমে যখন আমি চাষ করি তখন আমাকে অনেকেই না করেছিল কিন্তু বর্তমানে সবাই এসে আমার ফলন দেখছেন, পরামর্শ চাচ্ছেন। সবাই এখন অনেক খুশি। মাত্র ২৫ শতাংশ জমিতে তরমুজ আবাদ করেছি। আশা করছি প্রায় ১ লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পারব, বলেন তিনি।
এদিকে প্রথমবারের মতো কসবা কুটি এলাকায় বাহারি তরমুজের ভালো ফলন হওয়ায় এলাকার উঠতি বয়সের বেকার যুবকরাও পতিত জমিতে তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
মো. সাইদুল ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, এই এলাকায় আমাদের ভাই মো. ছামিউল্লাহ প্রথম তরমুজের চাষাবাদ করেছে এবং অনেক ফল পেয়েছে। আমরা এতে খুশি। আগামীতে আমরাও এই তরমুজ চাষ করার চিন্তা করছি।
এছাড়া আনোয়ার নামের এক কৃষক এই বছর ৬৫ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এর মধ্যে হলুদ তরমুজ চাষ করেন ২০ শতক জমিতে এবং বাকি ৪৫ শতক জমিতে চাষ করেন কালো তরমুজ। সবমিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার তরমুজ আছে জমিতে। আর পনের-বিশ দিনের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হবে এই সব তরমুজ। তাই বর্তমানে গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে আনোয়ারের।
এখন পর্যন্ত হলুদ তরমুজ চাষে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন তিনি। বর্তমান বাজারে হলুদ জাতের তরমুজের প্রতি কেজির দাম প্রায় একশ টাকা। সে হিসেবে প্রায় দশ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন আনোয়ার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলার তরমুজ চাষ সফলতা মিলছে। তরমুজ চাষ শুরু থেকেই তাকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করে আসছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা। এছাড়া মাঠ পর্যায় ও জেলা পরজায়ে অনেক কর্মকর্তারা সহযোগিতা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। আশা করা যাচ্ছে ধীরে ধীরে আরও অনেকেই আগ্রহী হবেন এই তরমুজ চাষে।