ঢাকার সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেল যোগাযোগে নতুন একটি ট্রেন যোগ হতে চলেছে। একইসাথে ঢাকা-সিলেট রেলপথে চলাচলকারী ‘কালনী এক্সপ্রেস’ ট্রেন ও ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রেলপথের ‘বিজয় এক্সপ্রেস’ ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দিবে যাত্রাবিরতি । এ ছাড়া বিদ্যমান ট্রেনগুলোতে আসন বাড়ানোর বিষয়েও সিদ্ধান্ত ও যাত্রীদের আসনসংকটের সমাধান নিয়ে কাজ চলছে ।
ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন ট্রেন চালু ও দুটি আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছেন । এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখা থেকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে । গতকাল বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখার উপসচিব (মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ভূইয়া) স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছিল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া দীর্ঘকাল ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট রেল যোগাযোগের সংযোগস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর কাছে রেল অত্যন্ত জনপ্রিয় মাধ্যম । কিন্তু বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রীর ভিড় দেখা যাচ্ছে। ট্রেনে উঠতে গিয়ে দুঃসহ বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন টিকিটধারী যাত্রীরা এবং নির্ধারিত বিরতিতে ট্রেনে উঠতে পারছেন না । ট্রেনের আসনসংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য ।এমন্তবস্থায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেলভ্রমণ করছেন । এতে এক দিকে যেমন রেলভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে একইভাবে অন্য দিকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে । রেলভ্রমণে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর দুর্দশা লাঘবে ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-ঢাকা রেলপথে নতুন একটি ট্রেন সার্ভিস চালুকরণ এবং বিদ্যমান ট্রেনের আসন বাড়ানো ও বিজয় ও কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতি প্রয়োজন । বিভাগীয় কমিশনারের কাছ থেকে পাওয়া গোপনীয় প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রীর সামনে প্রস্তাব উত্থাপন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই প্রস্তাব অনুমোদন দিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন ।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-ঢাকা রেলপথে নতুন ট্রেন সার্ভিস চালু, বিদ্যমান “ট্রেনের যাত্রাবিরতি, আসন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে” আন্দোলন করে আসছিল জেলার বিভিন্ন নাগরিক মহল । জেলা প্রশাসক মো. শাহ্গীর আলম এসব দাবির কথা উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত বছর রেলের মহাপরিচালককে এক চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল ও দুপুরে তিতাস কমিউটার ছেড়ে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে । এতে প্রতিদিন আসনের বিপরীতে দুই থেকে তিন গুণ যাত্রী যাতায়াত করেন। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা অভিমুখী উপকূল, চট্টলা, জয়ন্তিকা, মহানগর এক্সপ্রেস, মহানগর গোধূলি, পারাবত ও তূর্ণা এক্সপ্রেস—সাতটি ট্রেনে আসন আছে মাত্র ৯৪০টি । ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা অভিমুখী তিতাস কমিউটার ট্রেনে দুপুরে ৩৮৪টি ও সকালে ২৫২টি আসন আছে। কিন্তু ২০১৭ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন থেকে বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার জন্য ট্রেনের বরাদ্দ করা আসন থেকে ৪০০ আসন কমিয়ে দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসক মো. শাহ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেলযাত্রীর পরিমাণ অনেক বেশি । জেলার বিভিন্ন নাগরিক মহল ট্রেনের ভ্রমণের দুর্দশা লাঘবে তাঁর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েছেন। এসব বিষয় উল্লেখ করে পাঠানো প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন করেছেন এবং অনুমোদন দিয়েছেন। একই সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আশা করছেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দ্রুত এই পদ্দক্ষেপটি বাস্তবায়ন করবেন। এটি বাস্তবায়িত না হলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের বিষয়টি উল্লেখ করে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কাছে তিনি আবার চিঠি লিখবেন বলেও তিনি জানান।