মৃত মায়ের লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত এসএসসি পরীক্ষার্থী

মৃত মায়ের লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত এসএসসি পরীক্ষার্থী সাদিয়া। গত মঙ্গলবার রাতে না ফেরার দেশে চলে যান সাদিয়ার মা। মা মারা যাওয়ায় কান্নায় শোকে ভেঙে পড়ে সাদিয়া আক্তার। মায়ের কথা ভেবে ও স্বজনদের কথামতো সে রাজি হয় পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে। সকালে চখের পানি মুছতে মুছতে পরীক্ষাকেন্দ্রে যায় মা হারা সাদিয়া। মায়ের লাশ বাড়িতে রেখেই ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে এই এসএসসি পরীক্ষার্থী।

সাদিয়া আক্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালী ইউনিয়নের আকানগর গ্রামের প্রবাসী শফিকুল ইসলামের একমাত্র কন্যা। বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছয়ফুল্লাহকান্দি মধ্যনগরে তাঁর নানার বাড়ি। নানার বাড়িতে থেকে নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ আবদুর রউফ মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে সে।

গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তার মা জলি আক্তার (৩৭) ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আজ সকালে তাঁর লাশ বাড়িতে নেওয়া হয়। মায়ের লাশ বাড়িতে রেখে আজ নবীনগরের সলিমগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছে সাদিয়া।

আরো পড়ুন

সাদিয়ার পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জলি বেগম বেশ কয়েক দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হঠাৎ তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। স্বজনেরা সাদিয়ার মাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মায়ের মৃত্যুর সংবাদে ভেঙে পড়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী সাদিয়া। বুধবার সকাল থেকে মায়ের লাশের পাশে বসে থাকে সাদিয়া। স্বজনেরা তাকে নানাভাবে মা হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেন। পরে স্বজনদের কথায় মায়ের লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দিতে যায় সাদিয়া। সাদিয়ার সঙ্গে এক স্বজনকে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সাদিয়া পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার পর স্বজনেরা তার মায়ের লাশ দাফনের প্রস্তুতি নেন। সাদিয়ার মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোকাররম হোসেন ওই কেন্দ্রে ছুটে যান। তিনি সাদিয়াকে সান্ত্বনা দেন। কেন্দ্রের বাইরে সাদিয়ার স্বজনদের সঙ্গেও তিনি কথা বলেন। পরীক্ষা শেষ হলে বিকেলে বাদ আসর জানাজার পর সাদিয়ার মায়ের দাফন সম্পন্ন হয়।

এসএসসি পরীক্ষার্থী

কেন্দ্রসচিব সলিমগঞ্জ আবদুর রউফ মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষার্থী সাদিয়ার মা হারানোর বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। তার কক্ষের পর্যবেক্ষকসহ আমি কেন্দ্রে তার খোঁজখবর রেখেছি। আমি দুবার কক্ষে গিয়ে তার খোঁজ নিয়েছি। সান্ত্বনা দিয়েছি। পরীক্ষার কক্ষে মাঝেমধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সহপাঠীরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মোটামুটি সব উত্তর লিখেছে সে।’

এসএসসি পরীক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার বলে, তার মা তাকে অনেক ভালোবাসতেন। মা চাইতেন যেন সে পড়াশোনা করে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। তাই মায়ের কথা ভেবেই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সে।

নবীনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোকাররম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে ওই কেন্দ্র পরিদর্শনে ছুটে যান। ওই পরীক্ষার্থীকে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। পরীক্ষার হলে অনেক কান্না করেছে সে। তবে তার পরীক্ষা ভালো হয়েছে।

Related Posts

About The Author

Add Comment